আমদানি বন্ধের খবরেই চড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের বাজার। এক দিনের ব্যবধানেই কেজিতে দাম বেড়েছে ৫ টাকার বেশি।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ৩৫ টাকায়, যা আগে ছিল ৩০ টাকা কেজি।
সরকার পেঁয়াজ আমদানির যে অনুমোদন (আইপি) দিয়েছিল তার মেয়াদ ৫ মে শেষ হয়ে গেছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১ মে থেকে ৬ মে পর্যন্ত ছয়দিন স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। ফলে এপ্রিলের পর আর আমদানির পেঁয়াজ দেশে আসেনি। পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমতি চেয়ে ব্যবসায়ীরা নতুন করে আবেদন করলেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না।
সরকার বলছে, কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় সরকার আপাতত পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেবে না।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে বুধবার কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে কৃষকরা দাম পায়নি। কৃষক যাতে তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম পায় সে জন্যই আমদানি কিছুটা সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ কৃষকরা উৎপাদন খরচ তুলতে না পারলে আগামী বছর পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হবে না। এখন দাম একটু বৃদ্ধির সুবাদে কৃষকরা পেঁয়াজের মূল্য পাচ্ছে।’
এদিকে আমদানি বন্ধের খবরে ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম চড়তে শুরু করেছে। খোদ সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ২৯ শতাংশ।
টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, এক সপ্তাহ আগে দেশে পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ২৮ থেকে ৩০ টাকা। বুধবার তা বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। সে হিসাবে দর বেড়েছে ২৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। আমদানি করা পেঁয়াজও বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, দরবৃদ্ধির হার ২৫ শতাংশ।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সেকেন্দার বলেন, ‘কাল-পরশু দেশি পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি করেছি ১৫০ টাকা। আজ (বুধবার) দেশিটা কিনতেই হচ্ছে ১৭০ টাকা পাল্লা। অন্য খরচও আছে। বিক্রি করছি ১৮০ টাকা পাল্লা। সে হিসাবে কেজিপ্রতি দাম পড়ছে ৩৬ টাকা। আমরা কেজিতে ১ থেকে ২ টাকার বেশি লাভ করি না।’
দাম কেন বাড়ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্দরে আমদানি বন্ধের খবরে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। আমরাও তো বুঝি না, ইন্ডিয়া থেকে আমদানি বন্ধ করলে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজের দাম না হয় কিছু বাড়তে পারে। কিন্তু দেশে তো এখন অনেক পেঁয়াজ। দেশি পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে। কেন এভাবে দাম বাড়ছে তা বড় ব্যবসায়ীরাই ভালো জানে।’
খুচরা বিক্রেতা রুবেল বলেন, ‘ঈদের পর থেকে পেঁয়াজের দাম কেজিতে এক-দুই টাকা বাড়ছিল। এখন আরও বাড়ছে। কাল পর্যন্ত যে পেঁয়াজ ৩৫ টাকায় বিক্রি করেছি তা আজ ৪০ টাকায় বেচলেও লাভ কম থাকছে। আমার পেঁয়াজ আগে কেনা, তাই দাম কম। কিন্তু আজ যেগুলো এনেছি সেগুলো ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বেচতে অইব। তয় দেশি পেঁয়াজের চাইতে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজের মান একটু খারাপ। দামও কম, ৩৫-৩৬ টাকা কেজি।’
একই বাজারের আরেক পাইকারি বিক্রেতা হারেস আলী বলেন, ‘মূলত দুই কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। বেপারীরা প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন হাট থেকে পেঁয়াজ কিনে ঢাকায় আনেন। তাদের কেনা দামের ভিত্তিতেই পাইকারি বাজারে দর নির্ধারণ করা হয়।
‘আবার বৃষ্টির কারণে দেশি পেঁয়াজ হাটে কম উঠছে। কারণ ভেজা পেঁয়াজ ২-৩ দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই কৃষকরা হাটে পেঁয়াজ তুলছেন না। ওদিকে ইন্ডিয়া থেকে পেঁয়াজ আমদানিও বন্ধ। এর প্রভাব পড়ছে বাজারে।’
‘বাজারে দুই ধরনের পেঁয়াজ পাওয়া যায়। সম্পূর্ণ দেশি জাত ও হাইব্রিড। দেশি জাতের চাষ হয় মূলত পাবনা ও রাজশাহী এলাকায়। আর হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ আসে ফরিদপুর থেকে। সেগুলোর দাম একটু কম। দুই জাতের পেঁয়াজে পাইকারিতে ২ থেকে তিন টাকা কমবেশি হয়। রাজশাহীর পেঁয়াজ পাইকারিতেই ১৯০ টাকা পাল্লা বা কেজিপ্রতি ৩৮ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার কৃষকের কথা বিবেচনা করে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখলেও তার সুফল কৃষকরা তেমন একটা পাবে না। কারণ দাদন বা ধারে টাকা নিয়ে কৃষক পেঁয়াজ চাষ করে। ফসল তুলে তাৎক্ষণিক তা বিক্রি করেই তারা দাদন বা ধারের টাকা শোধ করে। তাই কৃষকের কাছে এখন আর তেমন পেঁয়াজ নেই, যা আছে তা এখন স্থানীয় আড়তদার ও বড় ব্যবসায়ীদের হাতে।
[টিবিএন৭১/আরএস]