ব্যস্ত সড়ক- মহাসড়কগুলোতে নেই গাড়ির শব্দ, যানজট, পথচারীদের হুড়োহুড়ি এবং কর্মব্যস্ততা। যান্ত্রিক কোলাহলে ভরা শহরটি এখন একেবারেই শান্ত ও নীরব। এই ফাঁকা ঢাকায় ঈদের প্রশান্তি যেন এক চেনা-অচেনা আবেশ। ঈদের ছুটিতে এমনই ফাঁকা এক রাজধানী দেখছেন ঢাকায় রয়ে যাওয়া মানুষজন। তারা বলছেন, সবসময় এমন ঢাকা হলে পুরো পরিবেশটাই পাল্টে যেতো। ঢাকা হয়ে উঠতো সত্যিকারের বাসযোগ্য শহর।
সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে ছিল না স্বাভাবিক দিনের যানজট, হর্নের কর্কশ শব্দও অনুপস্থিত। অলস দুপুরে ফাঁকা রাস্তায় হালকা বাতাসের সঙ্গে খেলা করছিল রোদের ছায়া। সকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে ঈদ আনন্দ মিছিল হয়, যা নগরবাসীর মনে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে নেই স্বাভাবিক দিনের যানজট, হর্নের কর্কশ শব্দও অনুপস্থিত। সকালে ফাঁকা রাস্তায় হালকা বাতাসের সঙ্গে খেলা করছিল রোদের ছায়া।
ঈদ উপলক্ষে রাজধানীবাসীর বড় একটি অংশ গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। ফলে রাজধানীর জনবহুল এলাকাগুলো এখন অনেকটাই জনশূন্য। বিশেষ করে মতিঝিল, গুলিস্তান, ফার্মগেট, নিউ মার্কেটসহ ব্যস্ত এলাকাগুলোতে জনস্রোত নেই বললেই চলে।
অল্প সংখ্যক মানুষ যারা এখনো ঢাকায় রয়েছেন, তারা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন বা ঘুরতে বেরিয়েছেন। শিশুপার্ক, জাতীয় চিড়িয়াখানা, হাতিরঝিল ও বিভিন্ন শপিং মলে কিছুটা ভিড় দেখা গেলেও তা অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম।
রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ছুটির কারণে লোকসমাগম কম থাকায় কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই। তবুও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
গণপরিবহন স্বল্পতার কারণে যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া তুলনামূলক বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন যাত্রী।
সাধারণত কর্মব্যস্ত এই নগরী ঈদে ফাঁকা হয়ে গেলে এক অন্যরকম সৌন্দর্য ধারণ করে। নিরব, শান্ত এবং পরিচ্ছন্ন ঢাকায় ঈদের প্রশান্তি যেন আরও গভীর হয়। রাজধানী ঢাকা আবার পুরোনো রূপে ফিরবে ছুটি শেষে, যখন কর্মজীবী মানুষরা আবার ফিরতে শুরু করবেন। তবে আপাতত, ঈদের আনন্দে ফাঁকা ঢাকার শান্ত পরিবেশ উপভোগ করছেন নগরবাসী।
ডিএমপি সূত্র জানায়, ঈদ ঘিরে অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। এতে বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট ও অফিস ফাঁকা হয়ে যাবে। ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে নগরবাসী। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি- এই ভয়ের অন্যতম কারণ। এসব বিষয় মাথায় রেখে ঈদের আগে ও পরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ডিএমপি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক জানান, সাইবার মনিটরিংসহ গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নাশকতার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ঈদ আয়োজনকে নির্বিঘ্নে করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবার সবমিলিয়ে টানা ৯ দিনের লম্বা ছুটি ভোগ করছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সে অনুযায়ী, ছুটি শেষে আগামী ৬ এপ্রিল খুলবে অফিস-আদালত। তার আগ পর্যন্ত ঢাকা কিছুটা ফাঁকা থাকার সম্ভাবনাই রয়েছে।
[টিবিএন৭১/আরএস]