আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের

সাত কলেজকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আগামী রবিবার (০৩ নভেম্বর) থেকে মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) পর্যন্ত সাত কলেজের অভ্যান্তরীণ একাডেমিক সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছেন কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তিন দিন ক্যাম্পাসগুলোতে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবেন তারা।

শনিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা কলেজে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের সমন্বয়ক ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারি সাগর।

তিনি বলেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলের দাবির আন্দোলনে রয়েছি। আমরা ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করে আসছি। দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে তারা আমাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা শুরু করেছেন।

জাকারিয়া বারি সাগর বলেন, সাত কলেজের আন্দোলনের মুখে গত ২৫ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নেন। আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের আন্দোলনের ন্যায্যতা সম্পর্কে তাদের সামনে তুলে ধরি। তারা আমাদের সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা অনুধাবন করে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেয়।

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও আমরা ধারাবাহিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের দাবি ও আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরছি। সর্বমহলে আমরা আমাদের দাবির বিষয়ে সমর্থন পেয়েছি।

সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্লকেড ও বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সবুজ ভূঁইয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ সভায় সাত কলেজের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাইরে পৃথক প্রশাসনিক ভবনে কার্যক্রম চালানোর প্রস্তাব দেন শিক্ষা উপদেষ্টা। কিন্তু সাত কলেজ স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করায় এভা শেষ হয় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই।

উপদেষ্টাদের সঙ্গে সভা শেষ হওয়ার একই সময়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তই থাকছে। তবে তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে, আলাদা রেজিস্ট্রার থাকবে, ডেডিকেটেড কর্মকর্তা থাকবে। যেখানে তাদের বিষয়টা আলাদাভাবে দেখা হবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই সাত কলেজের প্রশাসনিক কাজ চলবে। আর সাত কলেজের জন্য এগুলো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে কথা বলে করা হবে।

প্রেস সচিবের এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে জাকারিয়া বারি সাগর বলেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রেস সচিবের এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমরা শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে এমন যেকোনো ধরনের প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির বিপক্ষে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখন শুনতে পাচ্ছি, সাত কলেজ নিয়ে ভেতরে ভেতরে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ঢাবি শিক্ষার্থীরা কেউই এখন আর এ অধিভুক্তি চাচ্ছেন না। আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও অধিভুক্তি বাতিলের আন্দোলনে রয়েছি। এর মধ্যে আমরা শুনতে পাচ্ছি, হঠাৎ করে ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে দিয়ে সাত কলেজকে পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়ার দুরভিসন্ধি হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করে দেবে। অধিভুক্তি বাতিল করার আগে অবশ্যই সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর বডি তৈরি করতে হবে। যে সমাধানকে আমরা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলছি।

নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে জাকারিয়া বারি সাগর বলেন, এসব দাবিতে আমরা আগামী তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আগামী রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সাত কলেজের অভ্যান্তরীণ একাডেমিক সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবে না। একইসঙ্গে সাত কলেজের সবগুলো ক্যাম্পাসে দাবির পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে এসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। আমরা রাস্তা অবরোধ করে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়, এমন কর্মসূচি থেকে সরে এসেছি। এসময়ের মধ্যে আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করব।






[টিবিএন৭১/আরএস]