৪১ দিনের লড়াই। সাংবাদিকেরা ঘন্টায় ঘন্টায় জানতে চাইছেন আপডেট, ডাক্তাররা বলছেন, প্লাজমা দেয়া হয়েছে, ভেন্টিলেশন লাগতে পারে, অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে; অজস্র মানুষ প্রার্থনা সব বৃথা। বলছি ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বরের কথা!
যাকে দেখে আমরা বড় হয়েছি, কখনও বা তার অনবদ্য আবৃত্তিতে হয়েছি রোমাঞ্চিত। ৯০ এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত বাঙালির মনে চিরস্থায়ী বাসস্থান যে মহান নায়কের তিনি "সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়"। আজ তার চলে যাবার দিন। ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর আজকের দিনে চলে যান না ফেরার দেশে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তো স্রেফ একজন অভিনেতা নন, আমাদের এক চলমান নস্টালজিয়া। অপু, ফেলুদা, উদয়ন পন্ডিত, অমল, ক্ষিদ্দা, ময়ূরবাহন, নরসিং, অসীম, রাজা লিয়ার কিংবা হরিদাসের বুলবুল ভাজার ঝুলির মতো কতো স্মৃতি তাকে নিয়ে।
আবার ট্রেন চলবে আর অপু দেখবে না ভাবতেই তো পারছি না। দুর্গাপুজো, কাশফুল, রেলগাড়ি আর অপু, যে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত আমাদের সঙ্গে। উদয়ন মাস্টার হেরে যাবে এ যে কঠিন কল্পনা। কৃষককে পথ দেখাবে কে? সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তো শুধু রুপালি পর্দার অভিনেতা নন, উনি আমাদের মনে গড়ে দেওয়া একেকটা চরিত্রের নাম।
সত্তরের দশকেই অর্জন করেছিলেন ‘পদ্মশ্রী’, কিন্তু তিনি তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, পরবর্তীতে ২০০৪ সালে পান ‘পদ্মভূষণ’ আর ২০১২ সালে চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পুরস্কার ‘দাদা সাহেব ফালকে’তে ভূষিত হন, পেয়েছেন ফ্রান্সের অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনবার, 'অন্তধার্ন ও দেখা' এর জন্য পেয়েছেন বিশেষ জুরি পুরস্কার,আর সবশেষে অধরা সেরা অভিনেতার পুরস্কারটি আসে ‘পদক্ষেপ’ এর মাধ্যমে।
স্বয়ং সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, তাঁর জীবনের সেরা অবিষ্কার সৌমিত্র। সাবলীল আর স্বকীয় ভঙ্গিমায় অভিনয় দিয়ে শুধু নিজেকে নয়, ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রকেই অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন—
"বোম্বে গিয়ে অনেক পয়সা-কড়ি আয় করতে পারতাম, কিন্তু আমি গ্লামারাস জীবন-যাপনের চেয়ে মধ্যবিত্ত জীবনকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। কারণ, আমি বিশ্বাস করি ক্যারিয়ারের চেয়ে আত্মার খোরাক বেশি জরুরী। অভিনয় আমার জন্য আত্মার খোরাক। আমার কাজ- গুলোই ভক্তদের প্রতি আমার সেবা, যাদের অফুরন্ত ভালবাসায় আমি আজকের সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।"
লেখালেখিতেও ছিলেন দারুণ! কবিতা লেখার পাশাপাশি আবৃত্তিকার হিসেবেও খ্যাতি কুঁড়িয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এঁকেছেন ছবিও। তিনি আজ না থাকলেও এসব কর্ম তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে এবং রাখবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, মানুষের মনের মনিকোঠায়।
[টিবিএন৭১/আরএস]