প্রতিভাময়ী কবি সিলভিয়া প্লাথ এর জন্মদিন আজ

"জীবনের শারীরিক এবং মানসিক সমস্ত অনুভূতিকে, সমস্ত রূপ-রস-গন্ধ আর বৈচিত্র্যকে আমি যাপন করতে চাই। অথচ আমার কী তীব্র সীমাবদ্ধতা!"

 - কথাটা উচ্চারণ করেছিলেন সিলভিয়া প্লাথ! 
সিলভিয়া প্লাথ একটা ঘোর!

সিলভিয়া প্লাথ প্রতিভাময়ী কবি, ঔপন্যাসিক, মানসিক অস্থিতিশীলতার বলি এক বিষাদী রাজকন্যা।

'মানুষ ভালোবাসি আমি। একজন ডাকটিকিট সংগ্রাহক যেমন তার পুরো সংগ্রহকে ভালোবাসে, তেমনি আমি সকল মানুষকে ভালোবাসি। প্রত্যেকটি গল্প, ঘটে যাওয়া ঘটনা, কথোপকথনের প্রত্যেকটি ছোট কথাকে আমি রসদ হিসেবে ধরে নেই। আমার ভালোবাসা নৈর্ব্যক্তিক নয় আবার সেটা একক বস্তুগতও নয়। একজন খোঁড়া ব্যক্তি, একজন মৃত্যুপথযাত্রী, একজন পতিতা- এভাবে আমি সকল মানুষ হতে চাই আর লেখায় ফিরে এসে আমি আমার চিন্তা, আবেগ দিয়ে ওই মানুষটির মতো করে লিখতে চাই। কিন্তু আমি তো আর সর্বজ্ঞানী নই। আমার একটাই মাত্র জীবন, আমার জীবনই আমাকে বাঁচতে হবে। এবং শুধুমাত্র বাস্তবিক আগ্রহের জায়গা থেকে আপনি আপনার জীবনকে সব সময় কল্পনা করতে পারবেন না।'

- সিলভিয়া প্লাথের দিনপঞ্জি থেকে
২৭ অক্টোবর ১৯৩২ সালে জন্ম নেয়া সিলভিয়া প্লাথ বরাবরই ভাল ছাত্রী। মাত্র ৮ বছর বয়সে পিতৃহীন হয়েছিলেন। পিতৃহীন মেয়েটি আর ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারেননি। বিষাদবিধুরতা আর হতাশার সেখন থেকেই শুরু। বাবার সমাধি দেখে এসে  লিখেছিলেন, ‘ইলেকট্রা অন এজেলা পাথ।’ স্কুলের পাট চুকিয়ে স্মিথ কলেজ থেকে সর্বোচ্চ সম্মান নিয়ে স্নাতক হন। তারপর ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যান কেমব্রিজে। আর সেখানেই প্রবলভাবে আকৃষ্ট হন টেড হিউজের কবিতার প্রতি। 

সিলভিয়া’র মা-বাবা, অরেলিয়া প্লাথ ও অটো প্লাথ ছিলেন বোস্টন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। মা পড়াতেন ইংরেজি ও জার্মান। বাবা জার্মান ভাষা ও প্রাণিবিদ্যা (মৌমাছি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ) বিভাগের অধ্যাপক। ‘প্লাথ’ তাঁর পৈতৃক জার্মান নাম। অন্য শিশুদের গড়পড়তা সাধারণ নিয়মের আগেই কথা বলা শুরু করেন সিলভিয়া। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই লিখলেন একটি সম্পূর্ণ কবিতা।

সিলভিয়ার লেখায় বার বার এসেছে নানা চিত্রকল্প, চাঁদ, রক্ত হাসপাতালের গল্প, ভ্রুণ আর করোটির কথা।  তাঁর কবিতায় ডিলান টমাস, ইয়েটস, মারিয়ান মুরের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।   

সিলভিয়ার বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য কোলোসাস এন্ড আদার পোয়েমস’, অনেকটা আত্মজৈবনিক উপন্যাস ‘দ্য বেল জার।’ মৃত্যুুর প্রর প্রকাশিত ‘এরিয়েল’ তাঁকে অমর করে রেখেছে। স্বীকারোক্তিমূলক কবিতাকে জনপ্রিয় করার জন্য ‘এ্যান স্যাক্সটনের’ সাথে সিলভিয়াও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। আমেরিকার বিখ্যাত  ‘পুলিৎজার’ পুরস্কার লাভ করেন তিনি। কোন কবির সর্বপ্রথম এ মরণোত্তর পুরস্কার লাভ। 

কিন্তু এটাই কি যথেষ্ট। ৩০ পেরোনোর আগেই আত্মহনন! সব আলো পেছনে ফেলে আঁধারকে আলিঙ্গন!  কেন? জীবন কি এতটা হেলাফেলার!

বিশ্বসাহিত্যের শক্তিমান কবি টেড হিউজ ছিলেন বিশ শতকের ইংরেজি সাহিত্যে সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত একজন পুরুষ। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও দাম্পত্য জীবনের ইতিহাস সাহিত্যমহলে আজ মিথ হিসেবে পাঠকখোরাকে পরিণত হয়েছে।

তাঁর প্রকাশিত পত্রিকার এক সান্ধ্যকালীন আড্ডায় স্বদেশ থেকে ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে ক্যামব্রিজে ছুটে আসা আমেরিকান রোমান্টিক কবি সিলভিয়া প্লাথের সঙ্গে টেডের প্রথম পরিচয় ঘটে। তারপর প্রেম। বয়সের দিক থেকে সিলভিয়া প্লাথ টেড হিউজের দুই বছরের ছোট হলেও সাহিত্যাঙ্গনে তিনি টেডের আগেই কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। ১৯৫০ সাল থেকেই বিশ্বের বড় পত্রিকাগুলোয় প্লাথের কবিতা প্রকাশিত হতো। পরিচয়পর্বের চার মাসের মধ্যেই দুজন বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।

কিন্তু বিয়ের পর টেডের বেপরোয়া চলাফেরা এবং পরনারী আসক্তি আগের তুলনায় বেড়েই চলল। পরনারী আসক্তির ব্যাপারটিই মূলত দুজনের সম্পর্কের গৃহে বিভেদের সাপ ঢুকিয়ে দিয়েছিল। ফলে সাত বছরের সংসার ফেলে দুটি শিশুসন্তান নিয়ে সিলভিয়া হঠাৎ আলাদাভাবে বসবাস করতে শুরু করলেন। তার পরও দুজনের মনের কোঠায় কোথাও যেন ভালোবাসার তীব্র একটা টান ছিল, গোপনে। 

টেডের পরনারী আসক্তিকে কী করে মানতেন সিলভিয়া!  ১৯৫৩-র অগাস্ট। একগাদা ঘুমের ওষুধ। তিন দিন ওভাবেই পড়ে থাকা। কিন্তু মৃত্যু আসেনি। এই প্রসঙ্গে লিখেছিলেন,
"আমি নি:শর্ত আত্মসমর্পণ করলাম আমার চারপাশের এই অন্ধকারের ঘূর্ণির কাছে; যাকে ভেবেছিলাম এক চিরন্তন বিস্মৃতি মাত্র।”

পরের ছ'মাস মানসিক হাসপাতালে। আবার পড়াশুনোর তেফেরা। ফ্রিডার বয়স দুই, নিকোলাস ন’ মাসের। কী ভীষণ ঠাণ্ডা লণ্ডনে। জল জমে বরফ, বাড়িতে দূরভাষ নেই। প্লাথ লিখছেন উপন্যাস "The Bell Jar"। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? এন্টি ডিপ্রেশানের-এর ওপর বেঁচে থাকা। রোজ ডাক্তার এসে দেখে যান। তারপর একদিন। প্লাথের মাথা গ্যাসচুল্লিতে ঢোকানো, গ্যাসের নব খোলা, কার্বন মনোক্সাইডের তীব্র বিষক্রিয়ায় মৃত্যু। আর বাচ্চারা? অন্য ঘরে। নিরাপদে। প্লাথের চোখের পাতা কি কেঁপেছিল একটুও?

অভিমানী  সিলভিয়া প্লাথের ডায়েরী থেকে...
"আর তুমি যখন শেষ পর্যন্ত একজনকে খুঁজে পেলে, যার কাছে নিজের আত্মাকে বিকিয়ে দেওয়া যায়... তখন সেই ভালোবাসার উচ্চারণে দেখবে শব্দরা কত জং ধরা, কুশ্রী, অবান্তর আর অর্থহীন। কারণ এতদিন যে ওরা ছিল নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে, অব্যক্ত।

কেউ কি আছ কোথাও, যে আমাকে একটুও বুঝতে পারো, একটুও ভালোবাসো?

আমি তো অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তোমার মোহে। এখনও তো! এই যে আমার শরীরে এত সোরগোল ; এমনটি আর তুলতেই পারেনি অন্য কেউ! তবু তোমায় আমি ছেঁটে ফেলেছি। কেন জানো? আমি যে তোমার কাছে ছিলাম শুধুই মুহূর্তসুখের খেলনা হয়ে। আমার শরীর? সে তুচ্ছ। আর আমার চিন্তন, আমার মনন, আমার স্বপ্ন? তুমি যে সেগুলোর কাছে পৌঁছতেই চাওনি কখনো!

আমি কাউকেই এমন পাইনি, যে আমার সোচ্চার ভালোবাসা আর তার দেখনদারি রূপটিও অক্লেশে গ্রহণ করে ঠিক একই তীব্রতায় আমাকেও তা প্রতিনিয়তই ফিরিয়ে দেবে!"

১৯৫৬ সালে সিলভিয়া প্লাথ বিয়ে করেন কবি টেড হিউজেসকে। দু'টি ফুটফুটে ছেলেমেয়ে। ফ্রিডা আর নিকোলাস। কিন্তু হতাশা? সে তো সর্বক্ষণের সাথী। লেখা চলছে, লেখা চলছে। অক্টোবর ১৯৬২। কবিতা লিখছেন প্লাথ। একের পর এক। ইতিমধ্যে মন ভেঙে গেছে। স্বামী চলে গেছেন অন্য নারীর সঙ্গে। স্মিথ কলেজের মেধাবী ছাত্রী সিলভিয়া মাকে লিখেছিলেন,

“সারা পৃথিবী আমার পায়ের নীচে। ফেটে চৌচির। যেন পাকা রসালো তরমুজের লালিমা।”
শেষ পর্যন্ত জীবনটাই দিয়ে দিলেন।

টেডের প্রেমিকা সোসান এলিস্টনের সঙ্গে ব্লোমসবারি ফ্ল্যাটে রাত্রীযাপনকালে সিলভিয়া একদা ফোন করলে অপরপ্রান্ত থেকে মেয়েলি কণ্ঠস্বর ভেসে আসে। তখন অত্যন্ত মর্মাহত হন তিনি। ফলে ক্ষোভ ও হতাশায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। কেননা, বিয়ের পর এই ব্লোমসবারি ফ্ল্যাটটিতেই সিলভিয়া ও টেডের প্রথম বাসর হয়েছিল। স্বামীর সঙ্গে বাসরের মতো পবিত্র একটি রাত যে ফ্ল্যাটে কাটিয়েছিলেন সিলভিয়া, সে ফ্ল্যাটে অন্য নারী ঢুকিয়ে টেড তা অপবিত্র করার কষ্ট সহ্য করতে পারেননি প্লাথ। স্বামীর টানে স্বদেশ ছেড়ে লন্ডনে থিতু হতে আসা এই আত্মবিধ্বংসী কবি কখনো চিন্তাও করেননি জীবনে এমন ভয়ংকর একটি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন। তাই চিরতরে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে স্বেচ্ছায়।
 
জানুয়ারির ভয়াবহ রূপ ধারণ করা লন্ডনের আবহাওয়া কেবল বাড়িয়ে দিল প্লাথ-এর ডিপ্রেশন। পুরোপুরি কয়েক সপ্তাহ তাঁকে সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালের বিছানায় রাখতে চেয়েছিলেন ডাক্তার। 

ভোরবেলা। ছেলেমেয়েদের রুমে প্লাথ রেখে এলেন কিছু রুটি ও দুধ। অতঃপর বন্ধ করলেন জানালা। ট্যাপ দিয়ে সিল করে দিলেন দরজা। নেমে এলেন নিচতলায়। নিজেকে আবদ্ধ করে ফেললেন রান্নাঘরে। হাঁটু গেড়ে বসলেন চুলোয়। ছেড়ে দিলেন গ্যাস। পরদিন মৃত সিলভিয়া প্লাথকে আবিষ্কার করলেন নার্স।

তাঁর আত্মহত্যার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। 

তিনি লিখেছিলেন,
'স্বপ্ন দেখতাম, জাদুমুগ্ধ করছো তুমি বিছানার 'পরে
আর চন্দ্রাহতের মত সুর তুলে, বিপর্যস্ত করে দিচ্ছো উন্মত্ত চুম্বনে।
বিশ্বাস ছিলো মনে, ওভাবেই ফিরবে তুমি, প্রতিশ্রুতি যতটা কড়কড়ে,
অথচ বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, তোমার ও-নামও আজ মুছে যাচ্ছে বিস্মৃতি-বাতাসে।'

নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন যখন সিলভিয়া  টেড হিউজ তখন ব্লোমসবারি ফ্ল্যাটে প্রেমিকা সোসানের সঙ্গে আমোদরত। ওই একই ফ্ল্যাটে ১৯৫৬ সালে বিয়ের পর সিলভিয়া আর হিউজ প্রথম বাসর রাত কাটান। কোন নারী হৃদয় নিজ বাসর ঘরে একই বিছানায় নিজের স্বামীর অন্য নারীসঙ্গ মেনে নেবে? ব্যাপারটি মোটেই সহজভাবে নেননি ‘দ্যা বেল জার’ এর লেখক সিলভিয়া প্লাথ। ফলাফল সোমবার সকালে এসে টেড হিউজ তাঁকে মৃত দেখেন। ‘লাস্ট লেটার’ কবিতাটি তিনি শেষ করেন ঠিক এভাবে, ‘‘Then a voice like a selected weapon/ Or a measured injection,/ Coolly delivered its four words/ Deep into my ear : ‘Your wife is dead.’”

টেড হিউজের প্রেমিকা আসিয়াও ১৯৬৯ সালে আত্মহত্যা করেন সিলভিয়ার মতো একই পদ্ধতিতে। জলন্ত গ্যাস চুল্লির ভেতর মাথা ঢুকিয়ে। মৃত্যুর আগে নিজের ৪ বছরের কন্যা সুরাকেও হত্যা করান তিনি। আত্মহত্যা করার আগে তিনি একটি চিরকুট লিখে যান। সেখানে তিনি বলেন, ‘ভেবে দেখলাম, টেড হিউজের কোথাও নেই আমি। তাঁর চিন্তার মধ্যে কেবল শুধুই সিলভিয়া’। এরপর তিনি প্রেমে পড়েন ব্রেন্ডা হেডেনসহ অনেক রমণীর। তবে নার্স ক্যারল অর্চার্ডকে তিনি শেষ পর্যন্ত বিয়ে করেন ১৯৭০ সালে। এই অর্চার্ডই হিউজের মৃত্যু (১৯৯৮) পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন। নারীসঙ্গ টেড হিউজকে উন্মাদ করে ফেলেছিল। তিনি তাঁর প্রেমিকাদের ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ নামে সম্বোধন করতেন। তাঁর জীবনে নারী অধ্যায়কে বর্ণনা করতে তিনি কবিতার ভাষায় বলেন, ‘Which bed ? Which bride ? Whiche breast’s comfort?’

তবে সিলভিয়া প্লাথকে তিনি আজীবন স্মরণে রেখেছিলেন সেটা আমরা দেখতে পাই তাঁর মৃত্যুর এক মাস আগে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘বার্থডে লেটারস’ এর মাধ্যমে। সেখানে প্রতিটি কবিতায় প্লাথের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ৮৮টি কবিতা জুড়ে শুধু সিলভিয়া আর সিলভিয়া। সিলভিয়ার প্রতিচ্ছবি হিসেবে এই কাব্যগ্রন্থটি আজও সর্বাধিক গ্রহণযোগ্যতার দাবি রাখে। 

অবশ্য ১৯৭১ সালে প্রকাশিত সমালোচক, এ.আলভেরেজ সিলভিয়া প্লাথের আত্মহত্যা বিষয়ে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থটির নাম দেন তিনি ‘দি সাভেজ গড’। সাব টাইটেল ‘এ স্টাডি অব সুইসাইড’। সাহিত্য-শিল্প চর্চাকারীরা যে কিছুটা আত্মবিধ্বংসী হয়ে ওঠে সে কথাটি তিনি ওখানে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বারবার বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। উক্ত লেখায় আত্মহত্যার মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও গভীর ভাবনা জাগায় পাঠকদের।

সিলভিয়া প্লাথ পুরোটা জীবন মৃত্যুর পথে হেঁটে গেছেন। তার কবিতাও উঠে এসেছে মৃত্যু থেকে। নিজ জীবনের নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা, কবি টেড হিউ-এর সাথে ব্যর্থ বিবাহিত জীবন, নিজ বাবা মা-র সাথে অমীমাংসিত সংঘাত সব সব কবিতায় উঠে এসেছে তাঁর। 

নিজ ডায়েরীতে লিখে গেছেন প্লাথ, “আমার জীবন যেন এক আনন্দ উজ্জ্বল ধনাত্মক বৈদ্যুতিক স্রোত আর হতাশায় ডুবে যাওয়া ঋণাত্মক বৈদ্যুতিক স্রোতের মাঝে এক যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় দোল খাচ্ছে। কোন এক মুহূর্তে যে স্রোতটি প্রধান, সেই স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায় আমায়।”  ১৯৬৩ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি তিরিশ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন সিলভিয়া প্লাথ। মৃত্যুই তাঁর শিল্প । “Dying is an art; I do it exceptionally well.”
 
সিলভিয়ার জীবনের বিষাদ মৃত্যুর পরও তাঁকে ছেড়ে যায়নি। যদিও সেটা তাঁকে দেখতে হয়নি। পুত্র নিকোলাস বিষাদময়তার কাছে পরাস্ত হয়ে ২০০৯ সালে আলাস্কায় আত্মহত্যা করে। কন্যা ফ্রেইডা ১৯৮৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসিত হয়ে ওখানকার নৈসর্গিক দৃশ্যের ছবি আঁকায় মগ্ন থাকে দীর্ঘকাল। ১৯৯৭ সালে টেড ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার পর বিলেতে ফিরে আসে ফ্রেইডা। হাঙ্গেরিয়ান চিত্রশিল্পী ল্যাসলো লুকার এর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ১৯৯৬ সালে, টেকে তা ২০১০ পর্যন্ত।

সিলভিয়া প্লাথ...যখন মনে ঘোরে...তখন নিঃশ্বাস ঘন হতে থাকে আমার...আমি শক্ত আরও শক্ত করে বালিশ টাকে আকড়ে ধরি....। তারপর একবুক দম নিয়ে বন্ধ করে থাকতে থাকতে যখন আমার সিলভিয়া প্লাথ আর হয়ে ওঠা হয়না...আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি। 

সিলভিয়া প্লাথ তুমি রাজত্ব করছ আমার নিঃসঙ্গতার অস্তিত্বে।






[টিবিএন৭১/আরএস]