কাণ্ড ঝলসানো রোগে মারা যাচ্ছে তরমুজ গাছ, দুশ্চিন্তায় কৃষক

লক্ষ্মীপুরে ‘গেমি স্টেম লাইট’ বা কাণ্ড ঝলসানো রোগে তরমুজ গাছ মারা যাচ্ছে। সকালে সুস্থ-সবল গাছ, বিকেলে পাতা ও কাণ্ড শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। ক্ষেতে এভাবে তরমুজসহ গাছ মারা যাওয়ায় তাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এদিকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, তাদের তৎপরতায় এখন রোগটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের দেওয়া হবে প্রণোদনা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলার প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৪ হেক্টর, রায়পুরে ৪০ হেক্টর, রামগঞ্জে ১ হেক্টর, রামগতিতে ১১০ হেক্টর ও কমলনগরে ২৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১০০ হেক্টর জমি বেশি। 

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের আবহাওয়া ও পরিবেশ তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। এছাড়া কম খরচে অধিক লাভ থাকায় কৃষকরা গ্রীষ্মের এই ফলউৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এই জেলায় এসে সরাসরি ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু ‘গেমি স্টেম লাইট’ বা ‘কাণ্ড ঝলসানো’ রোগের কারণে হঠাৎ করে ক্ষেতে ফলনসহ তরমুজ গাছ মারা যাচ্ছে। এতে ফলন বিপর্যয়ে লোকসানের আশঙ্কায় আছেন চাষিরা। 

স্থানীয় কৃষকরা জানান, সদরের নলডগি, চর মটুয়া, পুকুরদিয়াসহ আশপাশ এলাকার প্রায় ৩ হেক্টর তরমুজ ক্ষেতে রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তরমুজ ক্ষেতে নতুন রোগ সংক্রমণের পর মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. জাকির হোসেন কর্মকর্তাদের নিয়ে তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করেন। 

এ সময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমাম হাসান, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

কৃষকরা জানান,  প্রত্যেকটি চারা রোপণেই ১৫০/২০০ টাকা খরচ হয়। এবারের মতো পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়তে হয়নি তাদের। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তরমুজের চাষ করেন তারা। পরে উৎপাদিত তরমুজ বাজারে বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু এবার তরমুজ ক্ষেতের অবস্থা দেখে ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। 

কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সোলোভোরন, থ্রি-ভিট, সালবার, দস্তাসহ বিভিন্ন ওষুধ জমিতে ব্যবহার করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। এখানকার বেশির ভাগ চাষি ঋণগ্রস্ত। তাই লোকসান পুষিয়ে নিতে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, আক্রান্ত ক্ষেতগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। কাণ্ড ঝলসানো, ছত্রাক, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া’জনিত রোগ দেখা দিলে ‘ম্যানকোজেব’ বা ‘মেটালেক্সিল’ গ্রুপের যেকোনো ছত্রাকনাশক (যেমন টেলিনর) পানিতে মিশিয়ে তিনদিন সব তরমুজ গাছের গোড়া ভিজিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। অতিরিক্ত আক্রান্ত হলে দুই লিটার পানিতে এক কেজি চুন ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে তরমুজ ক্ষেতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করলে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

তিনি আরো জানান, তরমুজ চাষিদের সরকার ও কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহায়তা করবে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে প্রণোদনা দেওয়া হবে।


[টিবিএন৭১/আরএস]