‘বঙ্গবন্ধু-১০০’ জাতের সোনালি ধানে ভরে গেছে জমি

মফিজ শেখ। কোটালীপাড়া উপজেলার বাগান উত্তরপাড়া গ্রামের একজন কৃষক। তিনি এবছর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত উৎকৃষ্ট জিংক সমৃদ্ধ ‘বঙ্গবন্ধু-১০০’ জাতের ধান রোপণ করেছেন। গত বছর তিনি এই জমিতেই হাইব্রিড হীরা জাতের ধান রোপণ করেছিলেন। তবে, এবছর তার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। আমার সারা বছরের ধানের চাহিদা মিটে যাবে। স্থানীয় অনেক কৃষকই এই জাতের ধান রোপণ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় ‘বঙ্গবন্ধু ১০০’ জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সোনালী ধানে ভরে গেছে উপজেলার দুটি বিলের শত বিঘা জমি। এসব জমির কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। তাদের চোখে-মুখে এখন রঙিন স্বপ্ন।

জানা গেছে, দেশের প্রায় অর্ধেক নারী ও শিশু জিংকের অভাবজনিত নানা রোগে ভুগে থাকেন। সাধারণত জিংকের অভাবে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয় এবং শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এই অবস্থার মধ্যেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআরআরআই) বিজ্ঞানীরা এই জাতের ধান উদ্ভাবন করেন।

বিভিন্ন সময়ে ব্রি-৬২, ব্রি-৬৪, ব্রি-৭২, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৪ এবং বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০ এই ছয়টি জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বিআরআরআই। এগুলোর মধ্যে “বঙ্গবন্ধু ১০০” জাতটি অন্যদের তুলনায় উৎকৃষ্ট। মান ও উৎপাদনের দিক দিয়ে ভালো হওয়ায় এটি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রদর্শনী প্লট তৈরির কাজ চলছে। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধ করার ক্ষমতাগুণের উচ্চফলনশীল এই ধান মূলত বোরো মৌসুমের।

জিংকসমৃদ্ধ ব্রি বঙ্গবন্ধু-১০০ নতুন জাতের এ ধানটি আধুনিক উফশী ধানের বৈশিষ্ট্যসম্বলিত। পূর্ণ বয়স্ক গাছের উচ্চতা হবে ১০১ সেন্টিমিটার। জীবনকাল ১৪৮ দিন। এ ধানে জিংক রয়েছে ২৫৭ মিলিগ্রাম, এটি দেখতে নাজিরশাইল বা জিরা ধানের দানার মতো হবে। বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০ জাত ধানের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৭ দশমিক ৭ টন। তবে অনুকূল পরিবেশ ও উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে হেক্টর প্রতি ৮ দশমিক ৮ টন পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে, যা সন্তোষজনক।

গত ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে “বঙ্গবন্ধু ১০০” জাতের এ ধান কর্তন শুরু হয়েছে। উপজেলার বাগান উত্তরপাড়া বিলে কৃষক মফিজ শেখের জমির ধান কাটার মাধ্যমে এ জাতের ধান কাটা শুরু হয়। উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে ধান কাটা অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায়সহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট নতুন জাতের ধান ‘বঙ্গবন্ধু ১০০’ উদ্ভাবন করেছে। আজকে সেই জাতের ধান জাতির জনকের পূর্ণভূমি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শোভা পাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে আমাদের এ উপজেলায় বিনামূল্যে ৩’শ কেজি ধান দিয়েছিল। সেই ধান আমরা তিন কেজি করে ১০০ জন কৃষককে দিয়েছিলাম। এসব কৃষকরা ১’শ বিঘা জমিতে রোপণ করেছিলেন। ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। কৃষকরা খুবই আনন্দিত।

বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বাপার্ড) উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ তোজাম্মেল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি জিংকসমৃদ্ধ ধান। এতে জিংকের পরিমাণ ২৫.৭ মিলিগ্রাম। যা মানবদেহের জিংকের ঘাটতি পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।

বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বাপার্ড) মহা-পরিচালক সৈয়দ রবিউল আলম বলেন, দেশের কৃষকরা যাতে “বঙ্গবন্ধু ১০০” জাতের ধান রোপণে উদ্বুদ্ধ হয়, তার জন্য বাপার্ড কাজ করে যাচ্ছে।


[টিবিএন৭১/আরএস]