শেরপুর সদর উপজেলার দুগ্ধগ্রামে অজ্ঞাত রোগে প্রায় ৪০টি বিভিন্ন বয়সের গরুর মৃত্যু হয়েছে। এতে খামার মালিকরা প্রায় কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। একের পর এক গরুর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকার খামারিদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের তিলকান্দি পূর্বপাড়া ও ভাটিয়াপাড়া গ্রামে ছোট-বড় কয়েকটি গরুর খামার রয়েছে। প্রতিটি খামারে সার্বোচ্চ ১৫ থেকে সর্বনিম্ন ৬টি গরু রয়েছে। এসব খামারে প্রতিটি গাভি প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ লিটার দুধ দেয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে এই দুটি গ্রামকে দুগ্ধগ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে গত ১০ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত অজ্ঞাত রোগে ৪০টি গরুর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন একাধিক খামারি।
পাকুরিয়া পূর্বপাড়ার কৃষক আজিজুল হক বলেন, ‘আমি ছোট কৃষক। গরু লালন-পালন করেই সংসার চলে। আমার ৭ লাখ টাকা দামের ২টি গরু মারা গেছে। কি দিয়ে এই ক্ষতি পূরণ করবো।’
তিলকান্দি গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় সবাই গরু পালন করে। গাভির দুধ বিক্রি করে অনেকের সংসার চলে। আমি পেশায় একজন কৃষক। অনেক কষ্ট করে ৫০ হাজার টাকা জমিয়ে একটি ষাঁড় কিনেছিলাম। চিন্তা করেছিলাম কোরবানির ঈদে বিক্রি করব। কিন্তু অজ্ঞাত এক রোগে আমার গরুটি মারা গেছে। গরুটির হঠাৎ করে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় ও শ্বাসকষ্ট ছিল। এরপর মুখ দিয়ে লালা ঝরত।’
আরেক খামারি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গত কয়েক দিনে আমার খামারের ৩টি গাভি মারা গেছে। আমি গরিব মানুষ। অনেক স্বপ্ন নিয়ে গরু পালন শুরু করেছিলাম। এখন সব শেষ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
খামারি মনিরুজ্জামান মনির অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি গরু মারা গেছে। কেউ যদি প্রমাণ চায়, তাহলে কবর খুঁড়ে খুঁড়ে প্রমাণ দিতে পারব।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোনো সহযোগিতা পাইনি। গরুর অসুস্থতার কথা জানিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে ফোন দিলে তারা সকালের কথা বলে বিকেলে আসেন। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা নিয়ে চলে যান। তারা যাওয়ার পরপরই গরু মারা যায়। কিন্তু কি কারণে গরুগুলো মারা যাচ্ছে তারা এখন পর্যন্ত সেটি নিশ্চিত করতে পারেননি।’
শেরপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি দত্ত বলেন, আমার জানামতে ৩টি গরু মারা গেছে। খরব পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠিয়েছি। পরীক্ষার ফলাফল পেলে গরুগুলোর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে চিকিৎসা দিয়ে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
[টিবিএন৭১/আরএস]