হাইব্রিড ফসল চাষাবাদে প্রতিবছর কৃষককে বীজ কিনতে হয়। উন্নত বীজের নামে একক বাণিজ্যে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বীজ সরবরাহকারী হাতেগোনা কয়েকটি কর্পোরেট ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। এদিকে, মোট চাহিদার মাত্র ২৩ ভাগ যোগান দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিএডিসি। 
বাড়ছে মানুষ, কমছে আবাদি জমি। অথচ অব্যাহত বাড়াতে হচ্ছে খাদ্যের উৎপাদন। 
মাঠের পর মাঠে দিগন্তজোড়া ভালো ফলন। এ যে শুধু হাইব্রিড শস্যের ছড়াছড়ি। উৎপাদন বেশি, বাজারে ন্যায্য দাম মিলুক বা না মিলুক।
সার, বীজ, কীটনাশক, সেচের পানিসহ সব উপকরণ কিনতে হয় কৃষককে। খরচ বেশি, লাভের পাল্লা হালকা। এরসঙ্গে জমি পতিত রাখা যায় না বলে চাষের আগেই কৃষকের নাভিশ্বাস দশা।
কৃষকরা জানান, লাভ হইলেও করতে হয়, না হইলেও। জমি পালিয়ে রাখা যাবে না। ফেলে রাখলে ফলন কম হয়। এক বছর পর আবার নতুন করে অফিস থেকে বীজ আনতে হয়। কিন্তু অন্য দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে আমাদের মিল নেই। 
এই বাস্তবতা একদিকে। অন্যদিকে, হাইব্রিড শস্য এক মৌসুমের বেশি চাষাবাদ হয় না। প্রতিবছরই নতুন নতুন জাতের বীজ বাজারে ছাড়ছে কোম্পানী। কৃষকের চাহিদাকে পুঁজি করে বছর বছর দাম বাড়ানোর ঘটনা যেমন আছে তেমনি হঠাৎই মানহীন বীজ মৌসুমি ডিলারদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে কৃষকের মাঝে। 
কৃষকরা জানান, হাইব্রডের ফলন ভালো, তবে খেতে স্বাদ কম। 
চিত্র তো এমন ছিল না। এই উর্বরা ভূখন্ডে হাজার হাজার বছর কৃষি কাজ হয়ে আসছে কৃষকের নিজস্ব বীজ দিয়ে। অথচ ফলন বাড়াতে গিয়ে বীজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপাকে কৃষক। এমনকি চাষাবাদের ধরণও ঠিক করছে এসব কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। 
টাঙ্গাইল নয়া কৃষি আন্দোলনের সমন্বয়ক রবিউল ইসলাম বলেন, “আধুনিক কৃষি যেসব কৃষকরা করেন তারা কিন্তু বীজ রাখে না। তারা প্রতিবছরই কোম্পানির বীজ ডিলারদের কাছ থেকে কিনছে। তাদের হাতে যে বীজ ছিল, ফসলের যে বৈচিত্র ছিল সেটা পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের স্থানীয় যে জাতগুলো এখন খুবই সংকটের মধ্যে আছে।”
হাইব্রিডের প্রতাপে হুমকির মুখে ফসলের স্থানীয় জাত। আবার, জাত উন্নয়নের নামে অহরহ এসব স্থানীয় জাত প্যাটেন্ট করে নিচ্ছে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। 
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাকিনা খাতুন বলেন, “হাইব্রিড বীজের দাম তো অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে বীজটা কিনতেই হচ্ছেনা, আপনি নিজেই রেখে দিতে পারছেন। পরবর্তীতে নিজেই সেটা আবাদ করতে পারছেন। কিছু কিছু ফসলে আসলে ইনব্রিড হয়ওনা। ধানের ক্ষেত্রে ইনব্রিডের দিকেই যাওয়া উচিত। যদি ফলন ভালো থাকে, যদি জীবনকাল কম থাকে, যদি ধানের কোয়ালিটি ভালো থাকে- তাহলে কেন নয়।”
মাঠ থেকে পূর্বপুরুষের কৃষিজ বীজ হারিয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক উৎপাদন চক্র বিনষ্ট হচ্ছে বলেও মনে করেন গবেষকরা। 
হাজার বছর ধরে কৃষকরা এভাবেই বাংলা পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করে আসছে। এই আদি প্রজাতিগুলোতে যে বৈশিষ্ট্যগুলো লুকায়িত রয়েছে তা এসব উন্নত প্রজাতির বীজের মধ্যে নেই। তাই নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে আমাদেরকে বীজ সংরক্ষণের সেই পুরনো পদ্ধতিতেই যেতে হবে। না হলে জলবায়ু পরিবর্তনসহ যে পরিবর্তিত চ্যালেঞ্জগুলো আসছে সেগুলো মোকাবেলা করতে আমরা ব্যর্থ হবো। 
[টিবিএন৭১/আরএন]
									 
																													 
					 
			
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
			
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
			
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
			
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
			
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
			
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					 
					